পশুপাখির খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

কোনাে খাদ্যের গুণাগুণ ও পুষ্টিমান ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ বলে । আবার তৈরি করা পশুখাদ্যের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্যও গুদামজাত করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয় । 

পশুপাখির খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি


খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা
বাংলাদেশে প্রাপ্ত গবাদিপশুর খাদ্যের বেশির ভাগ কৃষি শস্যের উপজাত । এসব উপজাত শস্য মাড়াই বা শস্যদানা প্রক্রিয়াজাত করার পর পাওয়া যায় । বর্ষা মৌসুমে অনেক ঘাস উৎপাদিত হওয়ায় তা গবাদিপশুকে খাওয়ানাের পরও অতিরিক্ত থেকে যায় । আবার শীতকালেও অতিরিক্ত শিম গােত্রীয় ঘাস উৎপাদন হয় । তাই এই অতিরিক্ত ঘাস সংরক্ষণের প্রয়ােজন হয় । যখন ঘাসের অভাব হয় তখন এই সংরক্ষিত ঘাস গবাদিপশুকে সরবরাহ করা হয় । খাদ্য সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্যকে রােগজীবাণু ও পচনের হাত থেকে রক্ষা করা । পশুপাখির দানাদার খাদ্যকে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সংরক্ষণ করে বেশি দিন গুণাগুণ ঠিক রেখে সংরক্ষণ করা যায় । খাদ্যের আর্দ্রতা বেশি হলে এতে ছত্রাক জন্মায় । ছত্রাক জন্মানাে খাদ্য খেলে পশুপাখির দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । ফলে অনেক সময় পশু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে ।

খাদ্য সংরক্ষণের উপায়ের বিভিন্ন ধাপসমূহ
ক ) হে তৈরির মাধ্যমে সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করা হয় । দ্বিতীয় অধ্যায়ে হে তৈরি সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে । তবুও নিমে হে তৈরির বিভিন্ন ধাপগুলাে দেওয়া হলাে 

1। হে তৈরির জন্য শিম গােত্রীয় ঘাস যেমন , সবুজ খেসারি , মাসকলাই বেশি উপযােগী ।
২। ফুল আসার সময় ঘাস কাটতে হয় । 
৩। ঘাস রােদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ১৫-২০ % এর মধ্যে রাখা হয় । 
৪। ঘাস শুকিয়ে মাচার উপর স্তুপাকারে বা চালাযুক্ত ঘরে সংরক্ষণ করা হয় ।
খ ) সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করা হয় । দ্বিতীয় অধ্যায়ে সাইলেজ তৈরি সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে । তবুও নিমে সাইলেজ তৈরির ধাপগুলাে দেওয়া হলাে 
১। সাইলেজ তৈরির জন্য ভুট্টা , নেপিয়ার , গিনি ঘাস বেশি উপযােগী । 
২। ফুল আসার সময় রসাল অবস্থায় ঘাস কাটতে হয় । 
৩। ঘাস কেটে বায়ুনিরােধক স্থানে বা সাইলাে পিটে রাখা হয় । 
৪। সাইলাে পিটে ঘাস রাখার সময় ঝােলাগুড়ের দ্রবণ ছিটিয়ে দিতে হয় । 
৫। তারপর বায়ু চলাচল বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।




গ ) খড় তৈরির মাধ্যমে ফসলের বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয় । আমাদের দেশে বেশিরভাগ কৃষক পরিবারে গরুর জন্য খাদ্য হিসাবে পড় ব্যবহার করা হয় । গরুকে দৈনিক ৩-৪ কেজি শুকনাে খড় দেওয়া হয় । এটি আঁশজাতীয় খাদ্য । নিমে খড় তৈরির ধাপগুলাে দেওয়া হলাে 
১। শস্যগাছ ( ধান , ভুট্টা , খেসারি ইত্যাদি গাছ ) ক্ষেত থেকে কাটার পর সেগুলাে মাড়াই করে শস্যদানা আলাদা করে ফেলা হয় । 
২। বর্জ্য গাছগুলাে রােদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ১৫-২০ % এর মধ্যে এনে খড় তৈরি করা হয় । 
৩। খড় সাধারণত গাদা করে রাখা হয় । 
ঘ ) দানাশস্য ও তৈলবীজের উপজাত সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয় । ধান , গম , ভুট্টা , খেসারি , কলাই ইত্যাদি দানাশস্যের উপজাতসমূহ যেমন , চালের কুঁড়া , গমের ভুসি , ডালের খােসা , খৈল ইত্যাদি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয় । 
৬ ) কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয় । যেমন , পােস্ট্রির জন্য দানাদার খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করে মেশ , পিলেট ও ক্রাম্বল ফিড তৈরি করা হয় ।

Post a Comment

Previous Post Next Post