হযরত উসমান ( রা ) এর শাসন ব্যবস্থা ও কৃতিত্ব 

আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান ( রা ) খিলাফতের দিক হতে সফল খলিফা ছিলেন । তার খিলাফতের প্রথম দিকে হযরত উমর ( রা ) এর আমলে বিজিত অনেক অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয় । হযরত উসমান ( রা ) তা দৃঢ়তার সাথে দমন করে বিজয় । অভিযান অব্যাহত রাখেন । তিনি বিরাট নৌ - বহর তৈরি করেন , যার দ্বারা অনেক উপদ্বীপ জয় করেন । তিনি বিজিত অঞ্চলে শাসন ব্যবস্থা এমন সুদৃঢ় করেছিলেন যে , মুসলমানদের গৃহবিবাদের সময়ও সেসব অঞ্চল বিদ্রোহ করতে সাহস পায়নি । 

হযরত উসমান ( রা ) এর শাসন ব্যবস্থা ও কৃতিত্ব


সুযােগ্য শাসকঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলােকে ইসলামি শাসন শুরু হয় । ফারুকে আযম ( রা ) একে পরিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক করেন । এ নীতি হযরত উসমানের খিলাফতে বহাল ছিল । কিন্তু উমাইয়াদের প্রভাবে তাতে পরিবর্তন ঘটে । 

মারওয়ান হযরত উসমান ( রা ) এর নমনীয়তা ও ভদ্রতার সুযােগ নিয়ে প্রশাসনে পুরােপুরি অবৈধ প্রভাব খাটিয়েছিল । তবুও কোননা । ব্যাপারে হযরত উসমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তা তৎক্ষণাৎ সমাধান দিতে সচেষ্ট হতেন । জনসাধারণের অধিকার সংরক্ষণ এবং শাসকদের দোষক্রটি শােধরাবার প্রতি তিনি মনােযােগী ছিলেন । জনমতের প্রতি সদা সৃষ্টি রাখতেন ।

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণঃ রাস্ট্রীয় সীমানা বিরাট হওয়ায় প্রদেশগুলােকে শাসনের সুবিধার্থে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন । সিরিয়াকে তিনটি স্বতন্ত্র প্রদেশে বিভক্ত করেন । সাইপ্রাস , আরমেনিয়া ও তিবরিস্তানকে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ ঘােষণা করেন । সকল প্রদেশের মধ্যে পাঁচটি ছিল সবচেয়ে বড় প্রদেশ । এগুলােতে সেনাবাহিনীর প্রধান দপ্তর ছিল । অন্যান্য প্রদেশ এদের অধীন ছিল । যদিও সকল প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন গভর্নর ( ওয়ালি ) থাকতাে । কিন্তু বড় পাঁচটি প্রদেশের গভর্নরদের মর্যাদা ছিল গভর্নর জেনারেলের । 

সুষ্ঠু বায়তুল মাল ব্যবস্থাঃ হযরত উসমান ( রা ) সুষ্ঠু বায়তুল মাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে হযরত ওকবা ইবনে আমরকে এর তত্ত্বাবধানে এবং হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেতকে বিচারপতি ( কাজি ) নিযুক্ত করেন । এছাড়া শাসকদের কাজকর্ম দেখাশােনার জন্য হযরত মুহম্মদ ইবনে মােছলেমা এবং হযরত উসামা ইবনে যায়েদাকে নিযুক্ত করেন । 

পূর্ববর্তী খলিফার নীতি অনুসরণঃ হযরত উমর ( রা ) রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি যেভাবে নির্ধারণ করেছিলেন , হযরত উসমান । ( রা ) সেভাবেই রাখেন । বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগগুলাের উৎকর্ষ সাধন করেন । বৃত্তিসমূহ বাড়ায়ে দেয়া হয় । তার সময় দেশে অর্থ - সম্পদের প্রাচুর্য ছিল । সাধারণভাবে জনসাধারণ সুখ - শান্তিতে বসবাস করত । 

জনহিষ্কর কার্যাবলীঃ তার সময় স্থাপত্য শিল্পের অগ্রগতি হয় । বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন দফতরের জন্য প্রাসাদ তৈরি করা হয় । জনকল্যাণের জন্য সড়ক , গৃহ , মসজিদ , মােসাফিরখানা , অতিথি শালা স্থাপন করেন । খায়বরের দিক হতে মাঝে মাঝে জলােচ্ছাস আসত , এর ফলে জনসাধারণকে অনেক দুর্ভোগ পােহাতে হত । হযরত উসমান ( রা ) মদিনার কিছু দূরে মাহজুর নামক স্থানে একটি বেড়ীবাধ তৈরি করেন । ২৯ হিজরিতে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে মসজিদে নববির সম্প্রসারনের কাজ নতুন করে আরম্ভ করেন । আশে পাশের জমিগুলাে খরিদ করে দশ মাসের অবিরাম চেষ্টার পর সম্প্রসারণ শেষ করেন । সামরিক ব্যবস্থাঃ  সৈন্য বাহিনী সংগঠনে হযরত উমর ( রা ) এর রীতিনীতি বহাল রেখে এর উৎকর্ষ সাধন করেন । সেনাবাহিনীর ব্যারাক সংখ্যা বাড়ানাে হয় । যুদ্ধের ঘোড়া , উটের সংখ্যা যখন বেড়ে যায় , তখন তিনি এদের জন্য চারণভূমি সম্প্রসারণ করেন । নৌ - বহরের আবিস্কার হযরত উসমান ( রা ) -এর সময়ই হয়। 

ইসলামের প্রচার ও প্রসারঃ রাসুলুল্লাহ ( স ) -এর সহচর এবং প্রতিনিধি হওয়ায় হযরত উসমান ( রা ) এর ইসলামের প্রচার ও প্রসারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি ছিল । যুদ্ধবন্দীদেরকে ইসলাম ও খলিফার গুরুত্ব বর্ণনা করে দীন ইসলামের দাওয়াত দিতেন । হযরত উসমান ( রা ) নিজে মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতেন । ইসলামি দর্শন ও চিন্তাধারা বর্ণনা করতেন । তিনি নিজে ব্যবসায়ী হওয়ায় তার অঙ্ক শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান ছিল । তিনি হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত ( রা ) -কে সাথে নিয়ে ইলমে ফারায়েজ ( উত্তরাধিকার আইন ) -কে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিন্যস্ত করেন । 

কুরআন সংকলনঃ  হযরত উসমান ( রা ) এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল কুরআন মজীদকে সকল প্রকার বিকৃতির হাত হতে রক্ষা করা এবং এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার দান । ৩০ হিজরি সনে আজারবাইজান এবং “ বাবুল আবওয়াব ” বিজয়ের সময় বিভিন্ন দেশের ফৌজ একত্র হয় । তাদের মধ্যে কুরআন পড়া নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় । মিসরীয়দের পড়ার রীতি ছিল এক রকম , ইরাকি ও সিরিয়াবাসীদের পড়ার রীতি ছিল অন্য রকম । তাই তাদের মধ্যে কুরআন মজীদে পাঠের রীতি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় । এ মত পার্থক্যকারীগণ নিজেদের পড়া!

শুদ্ধ এবং অপরের পড়া অশুদ্ধ ভাবতে থাকেন । হযরত হােযায়ফা ( রা ) সাহাবা কেরামের সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্দিকে আকবর ( রা ) এর সময়কার লিখিত সংকলনটি এনে হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত এবং হযরত সায়ীদ ইবনে আছ ( রা ) এর দ্বারা এর আট কপি করে বিভিন্ন ইসলামি দেশে পাঠিয়ে দেন । এভাবে বিশুদ্ধ সংকলনটি বিভিন্ন দেশে ও শহরে প্রচার করা হয় , সাথে সাথে হযরত উসমান ( রা ) এর নিদের্শও দিয়েছিলেন যে , যারা নিজের উদ্যোগে সংকলন করেছে , তাদের সংকলনগুলাে নষ্ট করে দিবে , এ নির্দেশ পুরােপুরি পালিত হয় ।


Post a Comment

Previous Post Next Post